Skip to main content

পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক যুদ্ধ

একটা যুদ্ধ চলছে, যুদ্ধ। কোটি কোটি বছর ধরেই চলছে। এ যুদ্ধ এতোটাই ভয়াবহ যে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়নে মারা যাচ্ছে প্রতিদিন। 

পৃথিবীর ইতিহাসে এমন তীব্র আর ভয়াবহ যুদ্ধ আর কখনোই দেখা যায় নি। 

কিন্তু আমরা মানুষেরা কিন্তু এই যুদ্ধের কিছুই টের পাচ্ছি না।

এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন, এই যুদ্ধ করছেটা কারা?
 
  • ইজরায়েল
  • হামাস
  • রাশিয়া
  • না ইউক্রেন?

আর কেনইবা করছে? তাই না?

সঠিক উত্তর হচ্ছে, এদের কেউই না।

আজ আমরা জানবো এই পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তির পর থেকেই চলে আসা লাগাতার সেই যুদ্ধ ও তার ফলাফল নিয়ে।

তবে চলুন, শুরু করা যাক।



এই যুদ্ধ করছে আমাদের গ্রহের সবচেয়ে মারাত্মক সত্ত্বাটি। নাম তার ব্যাক্টেরিওফেজ (Bacteriophage), ছোট করে যাকে আমরা ফেজ/ফাজ (Phage) বলে ডাকি।

তো এই ফেজ/ফাজ আসলে কি?

আসলে ফেজ/ফাজ হচ্ছে ভাইরাস। জড় আর জীবের মাঝামাঝি এক স্বত্বা। এরা পুরোপুরি জীবিতও না, আবার পুরোপুরি মৃতও না। 



এদের মাথাটা একটু অদ্ভুত আকারের।এই বিশেষ আকারটির নাম “আইকোসাহেড্রন    (Icosahedron)”। 

এই আকারের বিশেষত্ব হচ্ছে এতে সব সময় ২০টা সারফেস আর ৩০টা কিনারা থাকবে।


এই মাথার ভেতরেই ভাইরাসের যাবতীয় জেনেটিক ইনফরমেশন/বস্তু থাকে। 

এই মাথাটা আবার অনেক সময় একটা লম্বা লেজের ওপর বসানো থাকে। এর নিচে থাকে পায়ের মত ফাইবার, যা ভাইরাসের চলাচলে সাহায্য করে।


মজার বিষয় হচ্ছে, পৃথিবীতে বাদবাকী যত জীব আছে (ব্যাকটেরিয়া সহ) সবাইকে একসাথে গুনলে যে সংখ্যা বের হবে সেই সংখ্যার থেকেও ফাজ/ফেজের সংখ্যা কয়েকগুন বেশী।

এবং খুব সম্ভবত এমন কোন জায়গা নেই যেখানে প্রাণ আছে, অথচ কোন ভাইরাস নেই।

বিলিয়ন বিলিয়ন ভাইরাস আপনার হাতে, পায়ে, মুখে, ক্ষুদ্রান্ত্রে, বৃহৎঅন্ত্রে, এমনকি চোখের পাতাতে পর্যন্ত আছে।

কি? চমকে গেলেন নাকি??
অবশ্য চমকে যাবারই কথা। কারণ পৃথিবীতে অধিকাংশ মৃত্যুর কারণই হচ্ছে এই ফেজ/ফাজ ভাইরাস। 

কিন্তু আপনি ভাগ্যবান।ঘাবড়াবার কিছু নেই। 

ভাইরাস সকালের নাস্তার জন্য নির্বিচারে গণহত্যা চালালেও তারা শুধুই ব্যাকটেরিয়াদের মারে, অন্য কাউকে না।

সাগরের বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়াদের প্রায় ৪০% প্রতিদিন মারা যায় ফেজ/ফাজ এর হাতে।

কিন্তু এই ফেজ/ফাজ এরও কিছু গুরুতর সীমাবদ্ধতা আছে। অন্যান্য ভাইরাসের মতই ফেজ/ফাজদেরও টিকে থাকা ও বংশবিস্তার করার জন্য একটা হোস্ট দরকার হয়। 

এদের শরীরটা একটা ফাঁপা কাঠামোর ভেতরে কিছু জেনেটিক পদার্থ ছাড়া তেমন কিছুই না।

সাধারণত এক ধরনের ফেজ/ফাজ একটি বিশেষ নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়াকে বা তার খুব ক্লোজ কিছু আত্নীয়দের (জিনেটিক্যালি কাছাকাছি) টার্গেট করে এবং শিকার করে।

আপনি ফেজ/ফাজ ভাইরাসকে এমন একটা গাইডেড মিসাইলের সাথে তুলনা করতে পারেন, যে কিনা শুধুমাত্র একটা আনলাকি পরিবারের সদস্যদেরই খুঁজে খুঁজে মারে।

কিভাবে? আসুন দেখিঃ 


যখন একটা ফেজ/ফাজ তার শিকার খুঁজে পায়, তখন সে তার রিসেপ্টরযুক্ত পায়ের মত ফাইবারগুলোকে সিরিঞ্জের মত ব্যবহার করে ব্যাক্টেরিয়ার শরীর ফুটো করে দেয়।

এরপর এক অদ্ভুত ভঙ্গিতে ফেজ/ফাজ তার লেজ চেপে বাঁকা করে এবং সেই ফুটো দিয়ে নিজের জেনেটিক ইনফরমেশন ওই ব্যক্টেরিয়ার ভেতর প্রবেশ করিয়ে দেয়। 

ব্যাস, কাজ শেষ

মিনিটখানেকের মধ্যেই পুরো ব্যাকটেরিয়ার নিয়ন্ত্রন পেয়া যায় সেই ফেজ/ফাজ। এবার ফেজ/আজ সেই ব্যাকটেরিয়াকে বাধ্য করে নতুন ফাজ/ফাজ ভাইরাস তৈরি করতে।

এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকে যতক্ষণ না ব্যাক্টেরিয়ার ভেতরের পুরোটা জায়গা সদ্যজন্মানো ফেজ/ফাজ দিয়ে ভরে না যায়।

সবশেষে নতুন ফেজ/ফাজ গুলো “এন্ডোলাইসিন” নামক এক শক্তিশালী এনজাইম তৈরি করে, যা কিনা ব্যাকটেরিয়ার গায়ে ছিদ্র তৈরি করে।

আস্তে আস্তে ভেতরের প্রেশার এতই বেশি হয়ে যায় যে, ব্যাকটেরিয়াটা প্রায় বিস্ফোরিত হয়ে মারা যায়। নতুন ফেজ/ফাজ বেড়িয়ে আসে আর এই চক্র আবার শুরু হয়।

গত কয়েকবছর ধরে এই ফেজ/ফাজ পৃথিবীর ২য় মারাত্মক (Deadly) প্রানীর নজরে এসেছে। বলেন তো তারা কারা??

ঠিক ধরেছেন, তাদের নাম “মানুষ”।


সম্প্রতি আমরা মিলিয়ন মিলিয়ন ফেজ/ফাজ আমাদের দেহে ইনজেক্ট করাতে আগ্রহ দেখাচ্ছি।

কারণ আমরা ডেসপারেট হয়ে উঠছি। We Screwed Up.

কিভাবে?


অতীতে সামান্য কোন ক্ষতই/ভুল স্টেপই আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারত। ব্যাকটেরিয়া ছিল আমাদের ফেজ/ফাজ। ঠিক যেন ছোট ছোট দানব যা নির্দয়ভাবে কেড়ে নিয়েছে অসংখ্য প্রাণ।

কিন্তু প্রায় ১০০ বছর আগে আকস্মিকভাবেই আমরা খুঁজে পাই এক প্রাকৃতিক সমাধান। 

আমরা খুঁজে পাই এক ধরণের ছত্রাক যা কিনা এক বিশেষ ধরণের যৌগ তৈরি করে, যা ব্যাকটেরিয়া খুব কার্যকরভাবে মেরে ফেলতে পারে। 

কেউ কি যৌগের নামটা বলতে পারবেন??

ঠিক বলেছেন, এটাই সেই জগৎবিখ্যাত “পেনিসিলিন (Penicillin)”। 

এরই সাথে শুরু হয় “এন্টিবায়োটিক (Antibiotics)” এর রাজত্ব। হঠাৎ করেই আমরা পেয়ে গেলাম ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী “সুপার ওয়েপন”।


এন্টিবায়োটিক এতই কার্যকর ছিল যে, আমরা ব্যাকটেয়ারিয়াদের “ভয়ঙ্কর” হিসেবে দেখাই বন্ধ করে দিলাম। 

শুধু বৃদ্ধ আর দুর্বলেরাই কেবল ব্যাকটেরিয়ার আক্রমনে ধরাশায়ী হয়ে মারা পড়ত।

আমরা আস্তে আস্তে বেশি বেশি এন্টিবায়োটিক খেতে লাগলাম, এমনকি খুব সামান্য সমস্যার জন্যেও। 

আমরা আমাদের অস্ত্র এন্টিবায়োটিক আর মনস্টার ব্যাকটেরিয়াকে অবজ্ঞা, অবহেলা কতে শুরু করলাম।

কিন্তু আমরা একটা জরুরী বিষয় ভুলে গিয়েছিলাম। ব্যাকটেরিয়া হচ্ছে এমন এক জীব যা বিবর্তিত হয়।
 
সুতরাং এক এক করে তারা আমাদের অস্ত্রের প্রতি “ইমিউন (Immune)” হতে শুরু করল। মানে ওই অস্ত্র দিয়ে তাকে আর ঘায়েল করা যাবে না।


এই অবস্থা চলতে চলতে আমরা একসময় তৈরি করে ফেললাম “সুপারবাগ (superbug)”, এমন ব্যাকটেরিয়া যা আমাদের কাছে থাকা প্রায় সব অস্ত্রের প্রতিই “ইমিউন” হয়ে উঠেছে।

আপনি এই লিখাটা পড়তে পড়তেও এই সুপারবাগ পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ছে। 

ধারণা করা হচ্ছে, 

২০৫০ সাল নাগাদ সুপারবাগ এত শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে যে তা ক্যান্সারের চেয়েও বছরে বেশি মানুষের প্রাণহানী ঘটাবে

এমন দিন আবার ফেরত আসছে সামনে যখন সামান্য ঠান্ডা কাশির মত অসুখও আপনি বা আপনার প্রিয়জনের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে।



এই পুরো ব্যাপারটার একটা পোশাকি নাম আছে, “এন্টি মাইক্রোবিয়াল রেসিস্টেন্স (Antimicrobial Resistance) বা AMR”। 

কিন্তু আমরা “এন্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স” নামটার সাথেই বেশি পরিচিত।

খোদ আমেরিকাতেই প্রতি বছর অন্তত ৩৫,০০০ জন মানুষ এ কারণে মারা যান। আগামী ২১০০ সাল নাগাদ এই মৃত্যুহার ভয়াবহ আকার ধারন করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তাই আপনারা যারা এই লিখা পড়ছেন, নিজের ও প্রিয়জনের স্বাস্থ্য নিয়ে একটু সচেতন হবার অনুরোধ থাকলো। 

বিশেষত আপনারা যারা এন্টিবায়োটিক নিচ্ছেন, প্লিজ কোর্স কমপ্লিট না করে খাওয়া ছেড়ে দেবেন না


মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের সেই ছোট্ট “মনস্টার” ফেজ/ফাজ আমাদের বাঁচাতেও পারে। 

আমরা সেসব ফেজ/ফাজ দের আমাদের দেহে ইনজেক্ট করতে পারি যাতে তারা আমাদের ইনফেকশন সারাতে সাহায্য করতে পারে।

কি?? নিশ্চই ভাবছেন,

ভাইরাস আবার কিভাবে আমাদের সাহায্য করবে?

তাই না?

আসলে কাহিনী হচ্ছে ফেজ/ফাজ হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া ধংসের জন্য বিশেষভাবে ট্রেনিং পাওয়া আর্মির মত। 

তারা ব্যাকটেরিয়া খুন করতে এতোটাই সিদ্ধহস্ত যে, ব্যাকটেরিয়া ছাড়া অন্য কিছু তাতে মারা পড়ে না।

মানুষের কোষ এতই আলাদা যে, ফেজ/ফাজ আমাদের কোষের কিছুই করবে না। 

আমরা প্রতিদিন বিলিয়ন বিলিয়ন ফেজ/ফাজ এর সংস্পর্শে আসি আর সতর্কতার সাথে একে অপরকে এড়িয়ে চলি।

এন্টিবায়োটিক হচ্ছে অন্ধ হয়ে কোন জায়গায় বোম ফেলার মত। খারাপ ব্যাকটেরিয়ার পাশাপাশি এমন অনেক ভাল ব্যাকটেরিয়াও তাতে মারা পড়ে, যাদের আমরা মারতে চাই না।

আর ফেজ/ফাজ হচ্ছে গাইডেড মিসাইলের মত, যেটা কিনা আশেপাশে কারো ক্ষতি না করে শুধুমাত্র পূর্বনির্ধারিত টার্গেটকেই আঘাত করবে।



এখন প্রশ্ন হচ্ছে, 

যদি ব্যাকটেরিয়া ফেজ/ফাজ এর বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তোলে তখন?

ব্যাপারটা আসলে এত সহজ না। শুধু যে সুপারবাগ বা ব্যাক্টেরিয়াই বিবর্তিত হবে এমনটা ভাবা কিন্তু ঠিক নয়। ফেজ/ফাজও কিন্তু বিবর্তিত হয়।

এই দুই গ্রুপের মধ্যে লড়াই কিন্তু আজ নতুন নয়, এ যুদ্ধ বিলিয়ন বিলিয়ন বছর ধরে চলে আসছে, এবং তাতে ফেজ/ফাজ দের রেজাল্ট সত্যি অসাধারণ।

ফেজ/ফাজ হচ্ছে এমন এক স্মার্ট অস্ত্র, যা কিনা  ব্যাকটেরিয়া নিধনে দিন দিন আরো উন্নত/দক্ষ হচ্ছে।

  • কিন্তু যদি সুপারবাগ আসে তখন কি হবে?
  • কেউ কি আমাদের অকালে মরণ ঠেকাতে পারবে না?

এতো দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। আমরা তারপরেও জিততে পারবো। 

গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র কয়েকটা প্রজাতির ফেজ/ফাজ এর বিরুদ্ধেও যদি কোন ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চায়, তবে তাকে ফেজ/ফাজ এর প্রতি গড়ে তোলা প্রতিরোধ ত্যাগ করতে হবে

(সব কি আর একসাথে পাওয়া যায়?)

তার মানে হচ্ছে আমরা এন্টিবায়োটিক দিয়েই ব্যাকটেরিয়ার মোকাবেলা করতে পারবো। এটা কিন্তু “শুধুমাত্র থিওরী” নয়, ইতোমধ্যে এটা সফলভাবে টেস্টও করা হয়েছে এমন একজন মানুষের ওপর, যার আর কোন আশা-ভরসা ছিল না।

pseudomonas aeruginosa নামের ব্যাকটেরিয়া বাসা বেঁধেছিল এক লোকের বুকের ভেতর। তো এই ব্যাকটেরিয়া প্রায় সব এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে “ইমিউন” ছিল। 

এই ব্যাকটেরিয়া এমনকি এলকোহলের মধ্যেও বেঁচে থাকতে পারত (সাধারণত এলকোহলে ব্যাকটেরিয়া বাঁচে না)।

বহু বছর যন্ত্রনায় ভোগার পর রোগীর বুকের ভেতর হাজারখানেক ফেজ/ফাজ ইনজেক্ট করা হয়।

মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই লোকটি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং তার বুকের ইনফেকশন “গায়েব” হয়ে যায়।

দুর্ভাগ্যবশত, এই চিকিৎসা এখনো “পরীক্ষাধীন” পর্যায়ে আছে। আর ফার্মা কোম্পানি গুলো এমন গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ দিতে নারাজ যেটা এখনো অফিশিয়াল অনুমোদন পায় নি। 

কিন্তু ধীরে ধীরে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে।

২০১৬ সালে এ গবেষণা অনেক বড় আকারে শুরু হয় এবং ফেজ/ফাজ অনেকের নজর কাড়তে সক্ষম হয়।


আমাদেরও এর সাথে নিজেদের মানিয়ে নেয়া উচিত। কারণ, “সুপার ওয়েপন এন্টিবায়োটিক” এর যমানা প্রায় শেষের পথে।

কনসেপ্ট টা অদ্ভুত হলেও এ পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক সত্ত্বাটাকে সরাসরি আমাদের দেহে প্রবেশ করানো বাঁচিয়ে দিতে পারে অসংখ্য প্রাণ।

Comments

Popular posts from this blog

ময়না তদন্ত সিরিজ — পর্ব একঃ ফিজিক্স

এই সুবিশাল আর ভয়ংকর সুন্দর মহাবিশ্বের অগণিত রহস্য বের করার উপায়কে আমরা বিজ্ঞান হিসেবে জানি। সুতরাং এই অসীম মহাবিশ্বের মতই বিজ্ঞানের পরিধিও সুবিশাল।  আর এই বিজ্ঞানের অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে ফিজিক্স (Physics) বা পদার্থবিদ্যা।  আক্ষরিক ভাবে বলতে গেলে ফিজিক্স হচ্ছে নলেজ অফ ন্যাচার (Knowledge of Nature)  বা প্রকৃতি বিষয়ক জ্ঞান অতিক্ষুদ্র সাব-এটমিক পার্টিকেল (Sub-atomic Particle) থেকে শুরু করে নক্ষত্রখেকো ব্ল্যাক হোল , সব কিছু কিভাবে জন্ম নেয়, বেড়ে ওঠে, মহাবিশ্ব চষে বেড়ায়, আর শেষে মারা যায় —  এসব বুঝতে হলে আমাদের ফিজিক্সের শরণাপন্ন হতেই হয়। আমাদের সমাজে ফিজিক্স একটা ভীতির নাম। গাদা গাদা সমীকরণ মুখস্থ করে পাশ তো আমরা করি ঠিকই কিন্তু ফিজিক্সের আসল ম্যাজিক আজীবন আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে যায়। সেই অবস্থা পরিবর্তন করতেই  এ ক্ষুদ্র প্রয়াস বলতে পারেন। এখানে আমি সহজ ভাষায় ফিজিক্সের অন্তর্গত বিষয়গুলো নিয়ে খানিকটা আলাপ করবো। তবে চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক আমাদের এখন পর্যন্ত চেনাজানা ফিজিক্সের জগতকে আমরা মোটামুটি ৩ ভাগে ভাগ করতে পারি  ক্ল্যসিক্যাল ফিজিক্স (Classical P...

অন্তিমযাত্রার পথে নাসার ভয়েজার প্রোবঃ চিরবিদায়ের হাতছানি

১৯৭৭ সালের আগস্ট আর সেপ্টেম্বর মাসে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে মহাশুন্যের পথে তাদের অসীম যাত্রা শুরু করে নাসার ভয়েজার ১ আর ২ নামের দুটি স্পেস প্রোব। 🚀 তারা শুধু পৃথিবী নয়, আমাদের সুবিশাল সৌরজগৎ পেরিয়েও এগিয়ে গেছে আরো অনেক দূর। ভয়েজার ১ আর ২ এর মিশন শেষ হয়ে যাবে মাত্র ৫ বছরেই , শুরুতে এমনটা ধারণা করা হলেও দূরদর্শী বিজ্ঞানী আর ইঞ্জিনিয়ারদের প্রচেস্টায় আজ ৪৭ বছর পরেও সচল আছে প্রোব দুটি। কিন্তু সবকিছুরই শেষ আছে। আজ প্রায় অর্ধশতাব্দি পর আমরা জানতে পেরেছি ভয়েজার ১ আর ২ তাদের জীবনকালের প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আর কিছুদিন পরেই হয়তো মানব সভ্যতার এই অমূল্য নিদর্শন চিরতরে হারিয়ে যাবে মহাশূন্যের অতল গহবরে। কিভাবে? আসুন দেখে নেই।

১.৬ লাখ বছর পর পৃথিবীর আকাশে ফিরে এল ধূমকেতুঃ C/2024 G3 অ্যাটলাস

অতি সম্প্রতি আমাদের দেখা দিয়ে গেল আমাদের সৌরজগতের মহাকাশের অন্যতম উজ্জ্বল এক সদস্য।  ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ২০ বছরের মধ্যে যতগুলো ধূমকেতু দেখা যাবে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল হচ্ছে C/2024 G3 অ্যাটলাস নামের এই ধূমকেতু। তবে সবচাইতে অবাক করা বিষয়টি হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে পরিচিত হ্যালির ধূমকেতুর মত এই ধূমকেতু কিন্তু ৭৬ বছর পর পর ফিরে আসে না।  সূর্যের চারদিকে নিজের কক্ষপথে একবার পুরোটা ঘুরে আসতে এই অ্যাটলাস ধূমকেতুর সময় লাগে দেড় লাখ বছরেরও বেশি সময়। হ্যা, আপনি ঠিকই দেখছেন C/2024 G3 অ্যাটলাস ধূমকেতু প্রতি ১ লাখ ৬০ হাজার বছর পর পর একবার করে পৃথিবীর আকাশে দৃশ্যমান হয়। চলুন দেখে নেয়া যাক বিস্তারিত। এই C/2024 G3 ধূমকেতু সর্বপ্রথম আমাদের নজরে আসে গত বছরের (২০২৪) এপ্রিলে, আমাদের নাসা নিয়ন্ত্রিত মহাজাগতিক বস্তুর ওপর নজরদারী করা রোবট অ্যাটলাসের ( Asteroid Terrestrial-impact Last Alert System - ATLAS ) মাধ্যমে।  ফলে, ধূমকেতুটার নাম দেয়া হয় C/2024 G3 অ্যাটলাস বিজ্ঞানীরা ধূমকেতুর কক্ষপথ গবেষণা করে বের করেছিলেন যে এই ধূমকেতু জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সূর্যের খুব কাছ দিয়ে অতিক্রম করবে। এই সময়ে...