Skip to main content

ময়না তদন্ত সিরিজ — পর্ব একঃ ফিজিক্স

এই সুবিশাল আর ভয়ংকর সুন্দর মহাবিশ্বের অগণিত রহস্য বের করার উপায়কে আমরা বিজ্ঞান হিসেবে জানি। সুতরাং এই অসীম মহাবিশ্বের মতই বিজ্ঞানের পরিধিও সুবিশাল। 

আর এই বিজ্ঞানের অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে ফিজিক্স (Physics) বা পদার্থবিদ্যা। আক্ষরিক ভাবে বলতে গেলে

ফিজিক্স হচ্ছে নলেজ অফ ন্যাচার (Knowledge of Nature) বা প্রকৃতি বিষয়ক জ্ঞান

অতিক্ষুদ্র সাব-এটমিক পার্টিকেল (Sub-atomic Particle) থেকে শুরু করে নক্ষত্রখেকো ব্ল্যাক হোল, সব কিছু কিভাবে জন্ম নেয়, বেড়ে ওঠে, মহাবিশ্ব চষে বেড়ায়, আর শেষে মারা যায় — 

এসব বুঝতে হলে আমাদের ফিজিক্সের শরণাপন্ন হতেই হয়।


আমাদের সমাজে ফিজিক্স একটা ভীতির নাম। গাদা গাদা সমীকরণ মুখস্থ করে পাশ তো আমরা করি ঠিকই কিন্তু ফিজিক্সের আসল ম্যাজিক আজীবন আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে যায়।

সেই অবস্থা পরিবর্তন করতেই এ ক্ষুদ্র প্রয়াস বলতে পারেন। এখানে আমি সহজ ভাষায় ফিজিক্সের অন্তর্গত বিষয়গুলো নিয়ে খানিকটা আলাপ করবো।

তবে চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক

আমাদের এখন পর্যন্ত চেনাজানা ফিজিক্সের জগতকে আমরা মোটামুটি ৩ ভাগে ভাগ করতে পারি 

  1. ক্ল্যসিক্যাল ফিজিক্স (Classical Physics)
  2. আপেক্ষিকতা (Theory of Relativity)
  3. কোয়ান্টাম ফিজিক্স (Quantum Physics)

চলুন শুরু করা যাক ক্ল্যসিক্যাল ফিজিক্স দিয়ে। 

১। ক্ল্যসিক্যাল ফিজিক্স (Classical Physics)

ক্ল্যাসিক্যাল ফিজিক্স নিয়ে কথা বলা শুরু করার একটা ভালো জায়গা হচ্ছে স্যার আইজ্যাক নিউটন।

অনেকের কাছেই এই নামটা শুনলেই গাছ থেকে মাথায় আপেল পড়ার বিষয়টা মনে পড়ে যেতে পারে, যদিও ঘটনাটা একেবারেই ফেক নিউজ।

যাই হোক, নিউটনের “গতিবিদ্যা”র (Dynamics) সুত্র থেকে আমরা জানতে পারি কোন পদার্থের গতি কেমন হবে বা কেমন হওয়া উচিৎ।

নিউটন আরো কাজ করেছেন “ইউনিভার্সাল ল অফ গ্র্যাভিটেশন” (Universal Law of Gravitation) নিয়ে আমাদের অভিকর্ষ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেয়।

তার প্রণীত এই অসাধারণ নীতি থেকেই আমরা গাছ থেকে আপেল মাটিতে পড়া আর সুদূর গ্রহ নক্ষত্রের অবিরাম ছুটে চলার মধ্যে একটা ছন্দ খুঁজে পাই।

নিউটনের আরেক যুগান্তকারী আবিষ্কার হচ্ছে আমাদের ছাত্রসমাজের এক মূর্তিমান বিভীষিকা “ক্যালকুলাস” (Calculus). 

এই অসম্ভব শক্তিশালী টুল ব্যবহার করেই বিজ্ঞানীরা বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে ফিজিক্সের নতুন নতুন শাখার জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন।


যদিও ক্যালকুলাস হচ্ছে ম্যাথমেটিকস এর বিষয়, তবে ফিজিক্স আর ম্যাথ আলাদা করার খুব একটা সুযোগ কিন্তু নেই।

কেউ যদি বলে বসে যে, ম্যাথ হচ্ছে ফিজিক্সের ভাষা তাহলে খুব একটা বোধহয় বাড়িয়ে বলা হবে না।

আপনি ম্যাথমেটিক্সকে একটা দালানের ফাউন্ডেশনের সাথে তুলনা করতে পারেন, যার ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গোটা ফিজিক্স।

নিউটনের কাজ কিন্তু এখানেই থেমে থাকে নি। তিনি আরো কাজ করেছেন অপটিক্স (Optics) নিয়ে, যাকে কিনা বলা যায় আলোর বিজ্ঞান।

আলো কোন মাধ্যমে কিভাবে চলাচল করে আর তার কি কি প্রভাব পরে, সেটা ঠিকঠাকভাবে বর্ণনা করাই হচ্ছে অপটিক্সের কাজ।

এখান থেকে আমরা প্রিজমে আলোর প্রতিসরণ, আয়নায় প্রতিফলন, অপটিক ফাইবারের নীতি, মরিচীকা এমন সব অসাধারণ বিষয় সম্পর্কে জানতে পারি।

এছড়াও আমরা লেন্স এর গঠন এবং কার্যপ্রণালী শিখে বানাতে পারি টেলিস্কোপ, ক্যামেরা বা ম্যাগনিফায়িং গ্লাস, যা কিনা আমাদের আবিষ্কারের খাতায় একের পর এক নিত্যনতুন জগত যোগ করতে থাকে।

এই টেলিস্কোপের মাধ্যমেই আমরা চিনতে শিখলাম অসীম মহাশুন্যকে। জানতে শিখলাম এই মহাবিশ্বে আমরা একা নই।

আমরা আরো জানতে পারলাম, এ মহাবিশ্ব আমাদের কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় না, বরং আমরাই প্রতিনিয়ত আমাদের গ্যালাক্সিকে ঘিরে আবর্তন করেই যাচ্ছি।

এখান থেকে আরো দুটো নতুন ফিজিক্সের জগত আমরা খুঁজে পেলাম, এস্ট্রোফিজিক্স আর কসমোলজি।

এস্ট্রোফিজিক্স (Astrophysics) আমাদের শেখায় হাজার হাজার আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্র, নেবুলা বা গ্যালাক্সি থেকে আলো হিসেবে আমাদের কাছে আসা ইনফরমেশন কিভাবে ডিকোড করতে হয়।


অন্যদিকে, কসমোলজি (Cosmology) আমাদের মহাবিশ্বের জন্ম, বেড়ে ওঠা, বিস্তার আর ভবিষ্যৎ মৃত্যু নিয়ে গবেষণা করে।

আবার, আমরা জানি আলোর মধ্যে তরঙ্গ ধর্ম আছে। তাই আপাতদৃষ্টিতে না হলেও অপটিক্স তরঙ্গের সাথে বেশ খানিকটা সম্পর্কিত।

শক্তি (Energy) এক মাধ্যমের কোন জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেভাবে চলাচল করে সাধারণত সেটাকেই আমরা তরঙ্গ (Wave) বলি। তরঙ্গের ভালো উদাহরণ হতে পারে পানির ঢেউ কিংবা বাতাসে শব্দের চলাচল।

এই তরঙ্গ নিয়ে আলোচনা করে বিজ্ঞানের শাখা, তার নাম ওয়েভ মেকানিক্স (Wave Mechanics) ।


আলোর কিন্ত এক জায়গা থেকে অন্য যায়গায় যেতে কোন মাধ্যম লাগে না। যদিও আলো মাধ্যম ছাড়া চলাচল করে, তবুও কিন্তু তার তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য আছে, যেমন প্রতিফলন, প্রতিসরণ আর অপবর্তন.

এই তরঙ্গের পথ ধরে খানিকটা হাঁটলেই আমরা পৌঁছে যাব ইলেকট্রো ম্যাগনেটিজম (Electromagnetism) এর রাজত্বে। এখানে আমরা পরিচিত হব ইলেক্ট্রিক আর ম্যাগনেটিক ফিল্ড এর সাথে।



জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল নামের একজন প্রতিভাবান বিজ্ঞানী প্রথম বের করেন যে, ইলেক্ট্রিক আর ম্যাগনেটিক ফিল্ড আসলে একই মুদ্রার দুটি সংযুক্ত পিঠ।

তিনি একটা চমৎকার নিয়ময়াবলীর ছকে এই দুটো বিষয়কে একসাথে বেঁধে ফেলতে সক্ষম হন। ম্যাক্সওয়েল আমাদের আরো জানান যে আলো হচ্ছে এক ধরনের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ।

আজকের দিনে আমরা সারাদিনে যা যা করি, তার অধিকাংশ কাজই ইলেকট্রোম্যাগনেটিজম নির্ভর আর সবই এর অন্তর্ভুক্ত।

এই তরঙ্গেরই এক চিরপরিচিত রুপ হচ্ছে শব্দ। বিভিন্ন মাধ্যমে শব্দের গতি আর আচার-আচরন কে নিয়ে গবেষণা করে বিজ্ঞানের যে শাখা তার নাম “একুস্টিক্স” (Acoustics).

চলুন আবার ফেরত যাই নিউটনে, কারণ উনার কীর্তি এখনো শেষ হয় নি। নিউটনের সুত্রগুলো থেকে আমরা বিজ্ঞানের আরো একটা শাখা পাই যার নাম “ক্লাসিক্যাল মেকানিক্স” (Classical Mechanics).

এই শাখা সলিড বস্তুর গতি, ঘর্ষণ এগুলো নিয়ে আলোচনা করে। এখান থেকেই আমরা শিখি একাধিক সলিড বস্তু কিভাবে একটা কাজ মিলেমিশে সহজেই করতে পারে। এর ভালো উদাহরণ হতে পারে গিয়ার, পুলি কিংবা লিভার।

ফ্লুইড মেকানিক্স (Fluid Mechanics) হচ্ছে ফিজিক্সের সেই শাখা যা তরল এবং গ্যাসের গতি-প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করে।

ফ্লুইড মেকানিক্স আমাদের শেখায় কিভাবে কোন মাধ্যমে তরলের “ফ্লো” (Flow) কাজ করে, প্লেনের ডানা থেকে কতটা “লিফট” (Lift) পাওয়া যায় বা আপনার গাড়ি ঠিক কতটা “এরোডায়নামিক” (Aerodynamic).


তবে ফ্লুইড মেকানিক্স ব্যাপারটা বেশ জটিল। কারণ একটা ফ্লো তে থাকা অসংখ্য ছোট ছোট পার্টিকেলের গতি-প্রকৃতি মুহূর্তের মধ্যেই অনেক বেশি প্যাঁচ খেয়ে যেতে পারে।

আর এই জটিলতার কথা বলতে গেলে আমাদের ফিজিক্স পরিবারের মাথা গরম এক সদদ্যের সাথে পরিচয় করতেই হয়। নাম তার “কেওস থিওরী”(Chaos Theory).

কেওস থিওরী হচ্ছে বড়সড় জটিল সিস্টেমের প্যাঁচালো আচরণ, যেখানে ছোট্ট কোন পরিবর্তনও সিস্টেমের ফাইনাল রেজাল্টকে দারুনভাবে পাল্টে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।

The Butterfly Effect এর নাম আশা করি শুনেছেন, সেটা পদার্থবিজ্ঞানের এই শাখারই অংশ।

আমাদের মাথা গরম ভাইকে পাশ কাটিয়ে খানিকটা এগোলেই আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে থার্মোডায়নামিক্স (Thermodynamics).

থার্মোডায়নামিক্স বেসিক্যালি শক্তি ও তার বিভিন্ন রুপে পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করে। এছাড়াও এখানে পাওয়া যায় এনট্রপি’র ধারণা (Entropy) যা কিনা আমাদের শেখায় যে কোন ধরণের শক্তি আসলে ঠিক কতটুকু ব্যবহার উপযোগী।


এই হচ্ছে সহজ কথায় ক্ল্যসিক্যাল ফিজিক্স, ১৯০০ সাল পর্যন্ত আমরা এগুলোই জানতাম।

এখান থেকেই আমরা জেনেছিলাম যে এ মহাবিশ্ব হচ্ছে ধ্রুব সত্যের মত এবং যদি আমরা ঠিকমত কোন কিছু পরিমাপ করতে পারি তাহলে তার ব্যাপারে ভবিষৎবাণী করাও অসম্ভব কিছু নয়।

কিন্তু আমরা কিন্তু সব ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম না। পরমাণুর অদেখা জগত আর বুধ গ্রহের অতিরিক্ত গতি আমাদের খানিকটা ভাবাচ্ছিল।

সে সময়ের বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন তারা খুব জলদি এই সমস্যাগুলোর সমাধান বের করে ফেলবেন।

কিন্তু তাদের নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতেই তারা আপেক্ষকতা আর কোয়ান্টাম ফিজিক্স এর জগতের দুয়ার আমাদের সামনে খুলে দিলো।

আর আমরা এই ইউনিভার্স সম্পরকে যা জানতাম বলে ধারণা করতাম সেটা সম্পূর্ণ বদলে দিলো। চলুন তাহলে আমরাও ঘুরে আসি আপেক্ষিকতা আর কোয়ান্টাম ফিজিক্স এর অদেখা জগত থেকে।

২। আপেক্ষিকতা (Theory of Relativity)



আপেক্ষিকতা নিয়ে কথা বলতে গেলে যে মানুষটার কথা না বললেই না, তার নাম এলবার্ট আইনস্টাইন। এই জিনিয়াস ব্যাক্তি আপেক্ষিকতার সাধারন আর বিশেষ সুত্র গঠন করেন।

আপেক্ষিকতার বিশেষ সুত্র (Special Theory of Relativity) আমাদের বলে যে, 

এই মহাবিশ্বে যে কোন পর্যবেক্ষকের জন্যেই আলোর গতি সর্বদা ধ্রুব

তার মানে হচ্ছে, যখন আপনি অনেক অনেক জোরে (আলোর বেগের কাছাকাছি গতিতে) ছুটতে থাকবেন তখন ঘটতে থাকবে অদ্ভুত সব ঘটনা — যেমন আপনার সময় ধীরে চলা শুরু করবে, আপনার দৈর্ঘ্য পরিবর্তন হয়ে যাবে ইত্যাদি।

এখান থেকে আমরা আরো জানতে পারি যে, শক্তি এবং পদার্থ একই জিনিসের ভিন্ন রূপ। এর মাধমে তিনি এক জগতখ্যাত ফর্মুলা প্রতিপাদন করে ফিজিক্সকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যান।

বলেন তো, কি সেই ফর্মুলা?

ঠিক ধরেছেন। নিচের ছবির টাই সেই জগতখ্যাত ফর্মুলা। একে আইনস্টাইনের পদার্থ ও শক্তির অভিন্নতা বিষয়ক সূত্র বলা হয়।

আপেক্ষিকতার সাধারন সুত্র (General Theory of Relativity) আমাদের জানায় যে, স্পেস (Space) আর টাইম (Time) একটাই ফেব্রিকের অংশ। তার নাম আমরা দিলাম স্পেসটাইম (Spacetime)

আমরা এই জানতে পারি যে, মহাকর্ষ আসলে কোন মৌলিক বল না। নানান ভরের বস্তু এই স্পেসটাইমের চাদর বাঁকিয়ে দেয়ার ফলেই আসলে মহাকর্ষ বলের উদ্ভব হয়, আর এর ফলেই ভরযুক্ত বস্তুগুলো একে অপরের দিকে “পড়ে যেতে” থাকে।

যখন আপেক্ষিকতা বড় বড় বিষয়ের ব্যখ্যা দিতে ব্যস্ত, তখন অন্যদিকে বিজ্ঞানীরা ক্ষুদ্রতম জগত কোয়ান্টাম ফিজিক্সের দরজায় কড়া নাড়ছেন।

আপেক্ষিকতা আর কোয়ান্টাম জগত এতোই বড় যে তাদের নিয়ে আলাদা পর্ব করতে হবে। সেটা পরবর্তীতে করার ইচ্ছে আছে।

তাই, এখন চলুন আমরা ঘুরে আসি কোয়ান্টাম জগত থেকে।

৩। কোয়ান্টাম ফিজিক্স (Quantum Physics)

কোয়ান্টাম জগতের কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে এটমিক থিওরী (Atomic Theory) । এটমিক থিওরী গবেষণা করে পরমাণু অর্থাৎ এটম (Atom) নিয়ে।

এটমের বৈশিষ্ট্য, কিভাবে পরমাণু গঠিত হয়, ইলেকট্রনের কক্ষপথ, শক্তিস্তর আর ইলেকট্রনের তরঙ্গধর্মী চার্জ ডিস্ট্রিবিউশন নিয়েই এটমিক থিওরীর রাজত্ব।

এর পরে আসে কনডেন্সেড ম্যাটার ফিজিক্স (Condensed Matter Physics) । কঠিন বা তরল পদার্থের অনেকগুলো পরমাণু একসাথে রেখে তাদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণা করাই কনডেন্সেড ম্যাটার ফিজিক্স এর কাজ।

এর কাছ থেকে আমরা চমকপ্রদ কিছু টেকনোলজি পেয়েছি যেমন লেজার, কম্পিউটার কিংবা কোয়ান্টাম ইনফরমেশন।

এবার আসি নিউক্লিয়ার ফিজিক্স (Nuclear Physics) এ। নিউক্লিয়ার ফিজিক্স বর্ণনা করে পরমানুর নিউক্লিয়াস কেমন আচরন করে।

এটা ছাড়াও নিউক্লিয়ার ফিজিক্স রেডিয়েশন, নিউক্লিয়ার ফিশন (Fission)এবং ফিউশন (Fusion) বিক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করে।

কোয়ান্টাম জগতের আরো গভীরে গেলে আমরা দেখা পাব পার্টিক্যাল ফিজিক্সের। পার্টিক্যাল ফিজিক্স (Particle Physics) পরমাণুর গঠনকারী উপাদান সাব এটমিক পার্টিক্যাল বা কোয়ার্ক (Quark) নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে।

এসব সাব-এটমিক পার্টিক্যাল (Sub-atomic Particle) নিয়েই আমাদের পার্টিক্যাল ফিজিক্সের স্ট্যান্ডার্ড মডেল গঠন করা হয়েছে।

কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরী (Quantum Field Theory) গোটা কোয়ান্টাম ফিজিক্স আর আপেক্ষিকতার বিশেষ সুত্রের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে আর এটাই আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত পাওয়া মহাবিশ্বের সেরা বর্ণনা।

দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, এই কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরী মহাকর্ষকে সবকিছুর সাথে এক সূতায় গাঁথতে পারেনি।

তাই বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম ফিজিক্স আর আপেক্ষিকতার সাধারণ সুত্রের মাঝে কোন সংযোগ স্থাপন করতে পারেন নি এখনো। এই নলেজ গ্যাপটার নাম হচ্ছে “ক্যাজম অফ ইগনোরেন্স (The Chasm of Ignorance)”.

তবে আমরা আশাবাদী যে ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীরা এই ক্যাজম অফ ইগনোরেন্স এর অন্ধকার জগতে আলো জ্বালিয়ে দিয়ে কোয়ান্টাম ফিজিক্স আর আপেক্ষিকতার সাধারণ সুত্রের মাঝে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হবেন।

যার ফলে সকল ধরণের ফিজিক্সের একটা থিওরী আমরা পেয়ে যাব।

আমরা এই অনাবিষ্কৃত থিওরীর নাম দিয়েছি “কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি (Quantum Gravity)” আর এই অসাধ্য সাধন করার জন্য বিজ্ঞানীরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছেন।

আর তার অনেকগুলো উদাহরণের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে স্ট্রিং থিওরী (String Theory) কিংবা লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি (Loop Quantum Gravity)

কিন্তু এটাই কিন্তু আমাদের অজানার সীমানা নয়। এখনো আমরা জানি না এমন বিষয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ডার্ক এনার্জি (Dark Energy) এবং ডার্ক ম্যাটার (Dark Matter), যা কিনা এই মহাবিশ্বের ৯৫% জুড়ে ছড়িয়ে আছে।

এর মানে হচ্ছে আমাদের যত ধরনের ফিজিক্স আছে তা দিয়ে আমরা এই সুবিশাল মহাবিশ্বের মাত্র ৫% বস্তুর বর্ণনা দিতে পারি।

বাদবাকি পুরোটাই এখন পর্যন্ত লুকিয়ে আছে রহস্যের আড়ালে।

এগুলো ছাড়াও আমাদের হাতে আরো অনেক অমীমাংসিত রহস্য রয়ে গেছে, যেমন বিগ ব্যাং।

এছাড়াও আমাদের জ্ঞানের পরীধির বাইরে এমন অনেক জিনিস আছে যেটা সম্পর্কে আমাদের কোন আইডিয়াই নেই।

আমরা কি যে জানি না সেটা পর্যন্ত আমরা জানি না, দেখুন দেখি কান্ড!!

এই জানা না জানার উৎস খুঁজতে গেলে আমরা গোটা ফিজিক্সের জগতের ওপর ছায়া দানকারী মেঘের মত আরেকটা শাখা পেয়ে যাবো।

নাম তার ফিলোসফি (Philosophy) বা দর্শন। অনেকেই এ বিষয় নিয়ে মজা করলেও, এই দার্শনিক প্রশ্নগুলোর ভেতর থেকেই ফিজিক্সের অনেক অনেক আবিষ্কারের যাত্রা শুরু হয়েছে।

যেমন,

  • মহাবিশ্বের গঠন কি রকমের?
  • কিভাবে মহাবিশ্বের উদ্ভব হল?
  • আমরা কি কেবলি কিছু পদার্থের সমষ্টি নাকি আমাদের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি আছে?
  • আমাদের ব্যবহৃত বিজ্ঞান কি আসলেই মহাবিশ্বের সত্য উন্মোচনের ক্ষমতা রাখে?
  • কিংবা ফিজিক্স যেমন আছে তেমনটা কেন এমন, কেন অন্যরকম না?

সুতরাং বুঝতেই পারছেন, আমাদের অজানার শেষ নেই। কিন্তু তাই বলে চেষ্টা করা তো আর থামিয়ে দেয়া যাবে না, তাই না? বিজ্ঞানীরা আর যাই হোক, হাল ছেড়ে দেয়ার পাত্র নন।

এভাবে চেষ্টা করতে করতেই আমরা অজানাকে জানার পথে এগিয়ে যেতে থাকবো।

আজ তাহলে এটুকুই থাকুক। জানিয়ে রাখা ভালো মনে করছি যে, এখানে অনেকগুলো বিষয়ই খুবই সাদামাটা ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

প্রতিটা বিজ্ঞানের শাখাই আবার অনেকগুলো উপশাখায় বিভক্ত। সেগুলো সব উল্লেখ করতে গেলে লেখাটা অতিরিক্ত বড় হয় যাবে বলে আপাতত সেই লোভ সামাল দিচ্ছি।

লেখাটি আপনাদের ভালো লেগে থাকলে পরবর্তীতে সেগুলো নিয়ে আলাদা কন্টেন্ট বানানোর ইচ্ছে রইল। কারো দ্বিমত বা পরামর্শ থাকলে সেটা সাদরে গৃহীত হবে।

তথ্যসুত্রঃ The Map of Physics 





Comments

Popular posts from this blog

অন্তিমযাত্রার পথে নাসার ভয়েজার প্রোবঃ চিরবিদায়ের হাতছানি

১৯৭৭ সালের আগস্ট আর সেপ্টেম্বর মাসে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে মহাশুন্যের পথে তাদের অসীম যাত্রা শুরু করে নাসার ভয়েজার ১ আর ২ নামের দুটি স্পেস প্রোব। 🚀 তারা শুধু পৃথিবী নয়, আমাদের সুবিশাল সৌরজগৎ পেরিয়েও এগিয়ে গেছে আরো অনেক দূর। ভয়েজার ১ আর ২ এর মিশন শেষ হয়ে যাবে মাত্র ৫ বছরেই , শুরুতে এমনটা ধারণা করা হলেও দূরদর্শী বিজ্ঞানী আর ইঞ্জিনিয়ারদের প্রচেস্টায় আজ ৪৭ বছর পরেও সচল আছে প্রোব দুটি। কিন্তু সবকিছুরই শেষ আছে। আজ প্রায় অর্ধশতাব্দি পর আমরা জানতে পেরেছি ভয়েজার ১ আর ২ তাদের জীবনকালের প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আর কিছুদিন পরেই হয়তো মানব সভ্যতার এই অমূল্য নিদর্শন চিরতরে হারিয়ে যাবে মহাশূন্যের অতল গহবরে। কিভাবে? আসুন দেখে নেই।

১.৬ লাখ বছর পর পৃথিবীর আকাশে ফিরে এল ধূমকেতুঃ C/2024 G3 অ্যাটলাস

অতি সম্প্রতি আমাদের দেখা দিয়ে গেল আমাদের সৌরজগতের মহাকাশের অন্যতম উজ্জ্বল এক সদস্য।  ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ২০ বছরের মধ্যে যতগুলো ধূমকেতু দেখা যাবে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল হচ্ছে C/2024 G3 অ্যাটলাস নামের এই ধূমকেতু। তবে সবচাইতে অবাক করা বিষয়টি হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে পরিচিত হ্যালির ধূমকেতুর মত এই ধূমকেতু কিন্তু ৭৬ বছর পর পর ফিরে আসে না।  সূর্যের চারদিকে নিজের কক্ষপথে একবার পুরোটা ঘুরে আসতে এই অ্যাটলাস ধূমকেতুর সময় লাগে দেড় লাখ বছরেরও বেশি সময়। হ্যা, আপনি ঠিকই দেখছেন C/2024 G3 অ্যাটলাস ধূমকেতু প্রতি ১ লাখ ৬০ হাজার বছর পর পর একবার করে পৃথিবীর আকাশে দৃশ্যমান হয়। চলুন দেখে নেয়া যাক বিস্তারিত। এই C/2024 G3 ধূমকেতু সর্বপ্রথম আমাদের নজরে আসে গত বছরের (২০২৪) এপ্রিলে, আমাদের নাসা নিয়ন্ত্রিত মহাজাগতিক বস্তুর ওপর নজরদারী করা রোবট অ্যাটলাসের ( Asteroid Terrestrial-impact Last Alert System - ATLAS ) মাধ্যমে।  ফলে, ধূমকেতুটার নাম দেয়া হয় C/2024 G3 অ্যাটলাস বিজ্ঞানীরা ধূমকেতুর কক্ষপথ গবেষণা করে বের করেছিলেন যে এই ধূমকেতু জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সূর্যের খুব কাছ দিয়ে অতিক্রম করবে। এই সময়ে...